জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহর সেনানিবাসে বৈঠক নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কে সিনিয়র সাংবাদিক জিল্লুর রহমান তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, "এত অতিকথন ভালো নয়। আপনি এটা অতিরিক্ত করে ফেলেছেন। সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেছেন এবং দেশটাকে একটা বিপর্যের মধ্যে নিয়ে গেছেন, নিয়ে যাচ্ছেন।"
জিল্লুর রহমান বলেন, "আমি শুনেছি যে ছাত্রনেতারা বলছেন, ৫ তারিখের পরে অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করার পরিকল্পনা করেছেন। কী হাস্যকর কথা! তারপর আপনি বলেছেন গোপন কথা, আপনার সঙ্গে ক্যান্টনমেন্টে আলোচনা হচ্ছে। আমার কথা হলো, সেই সময়ে সরকার গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে আসিফ নাজরুল যা বলছেন, হাসনাত আবদুল্লাহ যা বলছেন, যেসব আলোচনা হচ্ছে—এসব আলোচনা পাবলিক করা উচিত নয়। তাহলে আপনাদের সঙ্গে কেউ কথা বলবেন না কোনো দিন।"
তিনি আরও যোগ করেন, "হ্যাঁ, একটা আলোচনায় অনেক রকমের কথা হয়। আপনি কি সব আলোচনা পাবলিক করেন? আমরা কি সব সময় তা করি? এই যে শো-এর আগে বা পরে পলিটিশিয়ানরা যেসব কথা বলেন, আমি কি সেগুলো অন্য জায়গায় বলে বেড়াই? যদি বলতাম, তাহলে এত বছর এই শো চালাতে পারতাম না।"
সব সত্য সব সময় বলতে নেই উল্লেখ করে জিল্লুর রহমান বলেন, "আপনারা তো এখন দেশটাকে একটা অন্ধকার জগতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এখন দেশটাকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। গৃহযুদ্ধ আপনাদের পছন্দ হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষের পছন্দ নয়।"
তিনি আরও বলেন, "আপনারা এখন হয়তো অন্য কারো স্বার্থে কাজ করছেন। স্যরি টু সে দিস, আমি স্যরি, আপনি সেনাপ্রধানের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন না। আপনি সেনাপ্রধানের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন না। সেনাবাহিনীকে নিয়ে আপনি প্রশ্ন তুলতে পারেন না। জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর কোনো কারণ নেই। সেনাপ্রধান একবারের জন্যও বলেননি তারা ক্ষমতা নিতে চান। সেনাবাহিনী এ কথা বলেনি। তাহলে কেন আমরা বলছি?"
জিল্লুর রহমান আরও বলেন, "যেখানে বিএনপির মতো দল বলছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ চায় না। আপনি যদি জনগণের ক্ষমতা চান, আপনি যদি ভোটের অধিকার চান, তাহলে জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন। বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ—কে থাকবে কে থাকবে না, তা জনগণই ঠিক করবে।"
দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আজকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও আপনারা বিতর্কের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। প্রফেসর ড. ইউনূসের সঙ্গে সেনাপ্রধানের দ্বন্দ্ব তৈরি করবার চেষ্টা করছেন। কেন করছেন? এত অতিকথন ভালো নয়। একটা কথা মনে রাখবেন, আপনারা যা করছেন, প্রতি দিনক্ষণের হিসাব কিন্তু সবার কাছে আছে। গণমাধ্যমের কাছে আছে, এমনকি বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছেও আছে। এত সহজ নয়, এত অতিকথন... মোটেও ভালো নয়। আমি মনে করি, আপনি এটা অতিরিক্ত করে ফেলেছেন। সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেছেন এবং দেশটা একটা বিপর্যের মধ্যে নিয়ে গেছেন, নিয়ে যাচ্ছেন।"
জিল্লুর রহমানের এই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন, আবার কেউ কেউ এর সমালোচনাও করেছেন। তবে তার এই সতর্কবার্তা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবনার অবকাশ তৈরি করেছে।