সকল খবর দেশের খবর

হাসপাতালে ‘নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ’ নির্দেশ শেখ হাসিনার: আহত শিক্ষার্থী ইমরান

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ৪-৮-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০১৩

২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান। তার অভিযোগ, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে হাসপাতালে আটকে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

সোমবার (৪ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ এ সাক্ষ্য দেন ইমরান। তিনি জানান, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর বিজয়নগরের পানির ট্যাংক এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে তার বাঁ পায়ে, হাঁটুর নিচে গুলি লাগে। পরে তাকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।

জবানবন্দিতে ইমরান বলেন, ২৬ বা ২৭ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ১০টার দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঙ্গু হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন। এসময় শেখ হাসিনা তার সঙ্গে কথা বলেন এবং তাকে “ম্যাডাম” সম্বোধন করলে, প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাকে আপা বলো।” কথোপকথনের একপর্যায়ে শেখ হাসিনা জানতে চান, তাকে পুলিশ গুলি করেছে কি না। ইমরান বলেন, “হ্যাঁ, সরাসরি পুলিশ গুলি করেছে। তবে কারা গুলি করেছে, তা শনাক্ত করতে পারিনি।”

ইমরানের ভাষ্যমতে, শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার সময় হাসপাতালের হেল্পডেস্কে গিয়ে স্পষ্টভাবে বলেন, “নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ”। তিনি বলেন, “আমি নিজ কানে কথাটি শুনেছি, তবে তখন বুঝতে পারিনি এর তাৎপর্য কী।”

পরবর্তীতে ইমরান লক্ষ্য করেন, তার অস্ত্রোপচার বিলম্বিত হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ওষুধও সরবরাহ করা হচ্ছে না। এমনকি তার বাবা তাকে ছাড়িয়ে নিতে এলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড় দিচ্ছিল না। একপর্যায়ে তাকে পঙ্গু অবস্থায় কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতিও চলছিল বলে অভিযোগ করেন ইমরান।

এই ঘটনার জন্য তিনি সরাসরি শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দায়ী করেন।

এই মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে গতকাল জবানবন্দি দেন মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণ।

গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার উপর চালানো সহিংস দমন-পীড়ন ও হামলার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয় গতকাল (রোববার)। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ সূচনা বক্তব্যের পর প্রথম ও দ্বিতীয় সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।

আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক রয়েছেন। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে এবং রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তাদের জন্য আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ মামলার একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে রাজি হন। সোমবার তাকেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

উল্লেখ্য, মামলার কিছু অংশ সরাসরি সম্প্রচার করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)।