জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ২৭ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচন। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলবে টানা বিকেল ৫টা পর্যন্ত। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলে স্থাপিত ২২৪টি বুথে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। একই দিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে হল সংসদ নির্বাচনও।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৭৪৭ জন। তারা কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪০টি ব্যালটে ভোট দিচ্ছেন। ব্যালটে টিক চিহ্ন দিয়ে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনের পর ভোট গণনা করা হবে বিশেষ ওএমআর প্রযুক্তির মাধ্যমে। প্রতিটি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছেন একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৬৭ জন পোলিং কর্মকর্তা এবং ৬৭ জন সহকারী পোলিং কর্মকর্তা।
জাকসুর চারটি প্রধান পদের জন্য এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৩৪ জন প্রার্থী। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন, যুগ্ম সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সব মিলিয়ে বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৮ জন।
নারী অংশগ্রহণে এবারও রয়েছে বড় ধরনের বৈষম্য। জাকসুর প্রার্থীদের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ ছাত্রী, বাকি ৭৫ শতাংশই ছাত্র। ভিপি পদে কোনো নারী প্রার্থী নেই। জিএস পদে ১৫ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র দুজন নারী। এমনকি চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কোনো নারী প্রার্থীই নেই। হল সংসদগুলোতেও একই চিত্র; ছাত্রী হলগুলোর পাঁচটিতে ১৫টি পদের জন্য কোনো প্রার্থীই নেই। সব মিলিয়ে হল সংসদের প্রার্থীদের মধ্যে ছাত্রী প্রার্থীর হার মাত্র ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে মোট আটটি প্যানেল। এর মধ্যে রয়েছে বামপন্থী, ইসলামী, জাতীয়তাবাদী, আওয়ামীপন্থী এবং স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীদের সমর্থিত জোট ও সংগঠন। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলে ভিপি পদে লড়ছেন শেখ সাদী হাসান এবং জিএস পদে তানজিলা হোসেন বৈশাখী। বাগাছাসের ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল ও আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম।
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়ছেন আব্দুর রশিদ জিতু এবং জিএস পদে মো. শাকিল আলী। ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরিফুল্লাহ আদিব এবং জিএস পদে মাজহারুল ইসলাম।
ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রফ্রন্টের সমন্বয়ে গঠিত ‘সংশপ্তক পর্যদ’ প্যানেলে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাহিদুল ইসলাম ঈমন এবং যুগ্ম সম্পাদক (নারী) পদে লড়ছেন সোহাগী সামিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস। অন্যদিকে, ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলে জিএস পদে শরণ এহসান, যুগ্ম সম্পাদক (পুরুষ) পদে নুর এ তামীম স্রোত এবং যুগ্ম সম্পাদক (নারী) পদে ফারিয়া জামান নিকি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এই প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা আদালতের নির্দেশে বাতিল হয়েছে।
দীর্ঘদিন পর এই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ফিরেছে গণতান্ত্রিক চর্চা ও প্রতিনিধিত্বের সুযোগ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি রয়েছে প্রত্যাশা, যাতে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সত্যিকারের শিক্ষার্থী অধিকার ও কল্যাণে কাজ করবেন।