জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতে আজ দুপুর ১২টায় রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বিএনপির একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারা।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৈঠকে মূলত দুটি বিষয়েই সরকারের স্পষ্ট জবাব চাওয়া হবে—আগামী জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ এবং একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ। এই দুই প্রশ্নের জবাবেই নির্ভর করবে বিএনপির পরবর্তী রাজনৈতিক কৌশল এবং আন্দোলনের কর্মসূচি।
বৈঠকের আগের দিন রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক জরুরি বৈঠকে দলটির অবস্থান পুনর্নির্ধারণ করা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, নির্বাচন নিয়ে সরকারের বক্তব্যে এখন পর্যন্ত যে অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, তা দূর করতেই প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হবে।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে জানতে চাই, জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময় ও রোডম্যাপ কী। ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত যে সময়সীমা বলা হচ্ছে, তা আসলে কোনো নির্দিষ্ট রোডম্যাপ নয়। আমাদের প্রশ্ন হলো, সরকার আসলে কী চায়—তা কী সরকারিভাবে জানানো হবে?”
তিনি আরও জানান, নির্বাচনমুখী সংস্কার, নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ইস্যু, প্রশাসনে দলীয়করণ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টন নিয়েও আলোচনা হবে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে তিনি জুন মাসের কথাও বলেন, যা নিয়ে দলটির মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। মির্জা আব্বাস বলেন, “জুন তো বর্ষার সময়। তখন নির্বাচন অনুশীলনযোগ্য নয়। এই দ্বৈত অবস্থান জনমনে সন্দেহ তৈরি করছে।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ বিদায় নিয়েছে, কিন্তু তাদের প্রভাব এখনো সচিবালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। এটি দূর না হলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ মসৃণ হবে না।”
বিএনপির মতে, সরকারের বক্তব্যে পরস্পরবিরোধী ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একজন উপদেষ্টা বলছেন, ‘জনগণ সরকারকে আরও পাঁচ বছর চায়’, আরেকজন বলছেন, ‘জনগণের বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এই সরকার বৈধতা পেয়েছে’। এই বিবৃতি কি ব্যক্তিগত, নাকি সরকারিভাবে বলা—তা স্পষ্ট করাও আজকের বৈঠকের এজেন্ডায় রয়েছে।
দলটি মনে করছে, ডিসেম্বরের পর নির্বাচন হলে তা রাজনৈতিক অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে। একইসঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন নেতারা।
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের জন্য সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য গড়ে তোলা হবে। যদি আজকের বৈঠক থেকে আশাব্যঞ্জক বার্তা না আসে, তবে দেশব্যাপী সভা-সমাবেশসহ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।
জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) নতুন কিছু রাজনৈতিক দল আবার সংস্কার শেষ করে পরে জাতীয় নির্বাচন চায়। কেউ কেউ স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে সম্পন্ন করার পক্ষেও মত দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মাঠে অস্থিরতা বাড়ছে। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
আজকের বৈঠকে সরকারের তরফ থেকে নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ও নির্বাচনের সময়সূচি জানানো হলে বিএনপি নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করতে পারে। অন্যথায় রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে চাপ প্রয়োগে আবারও রাজপথে নামবে দলটি—এমন ইঙ্গিত মিলেছে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে।