আদালতে হাজির করতে পারেনি পুলিশ, নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে রাতে শুনানি
মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আট বছরের এক শিশু ধর্ষণের মামলায় চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে রোববার দিনে আসামিদের আদালতে হাজির করতে পারেনি পুলিশ। পরিস্থিতি বিবেচনায় গভীর রাতে রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়েছে। আদালত আসামিদের ৫ থেকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন রোববার রাত ১২টার পর মাগুরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে বোনের শ্বশুর হিটু মিয়াকে (৪২) সাত দিন এবং ভগ্নিপতি সজিব হোসেন (১৮), শাশুড়ি জাবেদা বেগম (৪০) ও অপ্রাপ্তবয়স্ক এক কিশোরকে (১৭) পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে রোববার সকাল থেকে মাগুরা শহরে শিশু ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। বেলা ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত মাগুরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের মূল ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এরপর সেখান থেকে সরে গিয়ে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ভায়না মোড় মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে আসামিদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় তাদের আদালতে হাজির করতে পারেনি পুলিশ। পরে রাত ১২টার পর শুরু হয় রিমান্ড শুনানি।
শুনানিতে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী অংশ নেননি। আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিলে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন এবং রিমান্ড না দেওয়ারও দাবি করেন। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভুক্তভোগী শিশু অচেতন থাকায় জবানবন্দি নেওয়া যায়নি। ফলে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
ওসি আলাউদ্দিন বলেন, “রিমান্ডের আবেদনসহ অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি থাকলেও রোববার দিনে আসামিদের আদালতে হাজির করার ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। দিনভর আন্দোলনকারীরা আদালতের ফটক ঘিরে রেখেছিলেন। আসামিদের তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করছিলেন। এ কারণে রাতে শুনানি করেছে আদালত।”
মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) ভর্তি করা হয়। শুক্রবার রাতে তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। শনিবার ঢাকা মেডিকেলে শিশুটির অবস্থা ‘সঙ্কটাপন্ন’ জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। এরপর তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হলেও সন্ধ্যায় তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচে আনা হয়।
রোববার সকালে শিশুটির চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে সিএমএইচে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সেখানে তিনি শিশুটির সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।