জুলাই আন্দোলন দমনকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আজ (রবিবার) প্রথমবারের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। মামলাটি বিচারিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই বহুল আলোচিত এবং তা দেশের ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এই মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন, যা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
তিন আসামির মধ্যে কেবল চৌধুরী মামুন কারাগারে আটক রয়েছেন। তিনি দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হতে আবেদন করেন, যা ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করেছে। অন্য দুই আসামি—শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল—পলাতক থাকায় তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন তাদের পক্ষে মামলার দায়িত্ব পালন করছেন, আর মামুনের পক্ষে রয়েছেন আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ।
রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, এই মামলায় মোট ৮১ জন সাক্ষী তালিকাভুক্ত থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ২৫ থেকে ৩০ জনকে সরাসরি ট্রাইব্যুনালে হাজির করে সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। মামলাটি জুলাই আন্দোলন দমনকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে, তা হলো—মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ প্রদান, আন্দোলন দমনে উসকানি ও প্ররোচনা, আবু সাঈদ হত্যার নির্দেশ, চাঁনখারপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর নির্দেশ দেওয়া।
বিচার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মামলার রায় শুধু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিচারিক সিদ্ধান্তই নয়, বরং আগামী জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সম্প্রচারিত এই শুনানি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।