সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের চেক বিতরণের অনুষ্ঠান নিয়ে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। জেলা প্রশাসক এই অভিযোগকে ভুল বুঝাবুঝি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, চেক বিতরণ অনুষ্ঠানের জন্য তার পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি ও আয়োজন সম্পন্ন ছিল। তবে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের কারণে অনুষ্ঠানটি কিছুটা পিছিয়ে যায়, যা নিয়ে কিছু সাংবাদিকের পক্ষ থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
বুধবার ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে ২১ জন সাংবাদিক সন্তানকে বৃত্তির চেক বিতরণের কথা ছিল। অনুষ্ঠানটি দুপুর ১২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ের কারণে তা পিছিয়ে যায়। জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম জানান, মিটিংটি সকাল ১১টায় শুরু হয়ে ১২:৪৫ মিনিটে শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা কিছুটা দেরিতে শেষ হয়। এ সময় সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহসহ কিছু সাংবাদিক জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অপেক্ষা করছিলেন। তবে মিটিং শেষ হওয়ার আগেই তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ছেড়ে চলে যান এবং জেলা প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে চেক বিতরণ করেন।
জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, "এটা নিতান্তই ভুল বুঝাবুঝি। আমার প্রতি কারও অসন্তুষ্টি বা রাগের বহিঃপ্রকাশ। চেক বিতরণ অনুষ্ঠানের জন্য আমি খুব আগ্রহী ছিলাম এবং সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলাম। মিটিং শেষ হওয়ার পর আমি আমার রুমে গিয়ে দেখি তারা চলে গেছেন। আমাকে কোনো তথ্য না দিয়েই তারা চেক বিতরণ করে ফেলেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।"
তিনি আরও বলেন, "চেক বিতরণের জন্য আমার আয়োজন ও প্রস্তুতির কোনো কমতি ছিল না। আমি সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। এই ঘটনার সঠিকতা ও সত্য প্রকাশ না করে অসত্য সংবাদ প্রকাশ সত্যিই দুঃখজনক। আমাকে পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত করার জন্য এই কাজ করা হয়েছে।"
এদিকে, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে বৈষম্যের শিকার কিছু সাংবাদিকের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে যে, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের বৃত্তির টাকা প্রকৃত প্রাপকদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। বঙ্গ সংবাদ পত্রিকার ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেন, "সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের বৃত্তির বিষয়টি সব সাংবাদিককে অবহিত করার দরকার। কারা পাবেন এই বৃত্তি, কারা সাংবাদিকদের মাঝে সবচেয়ে দুস্থ ও অসহায়, তা নির্ধারণ করা উচিত। কিন্তু ময়মনসিংহে কিছু সাংবাদিক বা একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সরকারি সুবিধাগুলো জিম্মি হয়ে আছে। ফলে প্রকৃত প্রাপকরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।"
তিনি আরও বলেন, "গত কয়েক দশক ধরে ময়মনসিংহের সাংবাদিকদের সরকারি অনুদান ও সহযোগিতা কার নিয়েছেন, তাদের নামের তালিকা, গ্রহণযোগ্যতাসহ সকল অনুদানের সঠিক তদন্ত ও তথ্য প্রচারের আহ্বান জানাচ্ছি।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংবাদিক বলেন, "বিষয়টি বেশ হাস্যকর। সাংবাদিকরা চাইলে কত কিছু লিখতে পারে! যারা তিলকে তাল বানায়, তারাই আসলে ডেভিল। এইসব হলুদ সাংবাদিকদের আইনের আওতায় আনা উচিত। ডিসি সাব যেহেতু অন্য মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন, তারা চাইলে প্রেসক্লাবে গিয়ে চেক বিতরণ করতে পারতেন। এর আগেও তো প্রেসক্লাবে চেক বিতরণ হয়েছে। তাহলে এই সামান্য ঘটনা নিয়ে ডিসি সাবের বিরুদ্ধে নিউজ হচ্ছে, নিশ্চয় এর পেছনে আরো কিছু আছে।"
জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ছিলেন। তবে কিছু সাংবাদিকের উদ্দেশ্যমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে এই অনুষ্ঠানটি বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই ঘটনার সত্যতা যাচাই করে সংশ্লিষ্ট সকলেই ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত নেবেন।
এই ঘটনায় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে যে, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের বৃত্তির টাকা প্রকৃত প্রাপকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়া চালু করা হবে। এ বিষয়ে সরকারি তদন্তেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
তবে শেষ পর্যন্ত চেক বিতরণ ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের সভাপতি এম. আইয়ুব আলীর সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সম্পাদক ও ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেশ সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি খাইরুল বাশার।