ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সংস্কারের দাবিতে সংস্কার কমিটি আয়োজিত এক সাংবাদিক সভা মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) বিকাল ৫টায় দুর্গাবাড়ী রাইট পয়েন্ট অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের মাঝে বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকে উপহারসামগ্রী হিসেবে কম্বল বিতরণ করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব (সংস্কার কমিটি)-এর মূখ্য সংগঠক শিবলী সাদিক খান। বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক বদরুল আমীন, মজিবুর রহমান শেখ মিন্টু, জহর লাল দে, আলমগীর হোসেন উজ্জ্বল খান, আরিফ রেওগীর প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, "প্রেসক্লাব ফর প্রেসম্যান" দাবির আন্দোলন ন্যায্য স্বীকৃতি পেয়েছে এবং জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে প্রস্তাবনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তারা বলেন, সাংবাদিকদের দাবি বাস্তবায়নে আর দেরি সহ্য করা হবে না। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে সমঝোতা বৈঠক আহ্বান করে সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান সংস্কার কমিটির নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন গোলাম কিবরিয়া পলাশ, মাইন উদ্দিন উজ্জ্বল, সুমন ভট্টাচার্য, সাদেকুর রহমান, আবুল কালাম আজান, মীর বাবুল, মফিদুল ইসলাম লাভলু, রোকসানা আক্তার, সজিব বিপিন, আরিফ রব্বানী, আশিকুর রহমান মিঠু, আবুজর গিফার জাফর, তারিকুল ইসলাম লিটন, মমতাজ বেগম পপি, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মোশারফ হোসেন জুয়েল, আমিনুল ইসলাম, বিসু সাহা, সেলিম আকন্দ, আব্দুল হাকিম, খোকন সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, মারুফ হোসেন, শেখ মো. দ্বীন ইসলাম প্রমুখ।
উল্লেখ্য যে, কেন প্রেসক্লাব সংস্কার চায় সকল সাংবাদিক?
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে প্রেসক্লাবগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর আধিপত্য ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে অনেক যোগ্য ও কর্মরত সাংবাদিকরা সদস্যপদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি কেবল বৈষম্য সৃষ্টি করছে না, বরং স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রেসক্লাবের সংস্কার এবং সব সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্তি জরুরি, যাতে ন্যায়বিচার, পেশাদারিত্ব এবং গণমাধ্যমের নীতিমালা অনুযায়ী সুষ্ঠু সাংবাদিকতা নিশ্চিত হয়।
স্বাধীন সাংবাদিকতার স্বার্থে সদস্যপদ উন্মুক্ত করা-
গণমাধ্যমের মূল নীতি হলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা। কিন্তু যখন কোনো প্রেসক্লাব কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের স্বার্থরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং অন্যদের অংশগ্রহণে বাধা দেয়, তখন এটি গণমাধ্যমের মৌলিক চেতনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ময়মনসিংহে যেসব কর্মরত সাংবাদিক প্রেসক্লাবের সদস্য হতে পারছেন না, তারা এই বৈষম্যের শিকার। ফলে, তাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে এবং সত্য প্রকাশের পথ রুদ্ধ হচ্ছে। প্রেসক্লাবের সদস্যপদের দরজা সব সাংবাদিকের জন্য উন্মুক্ত করা হলে গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে।
সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন ও পেশাদারিত্বের নিশ্চয়তা-
প্রেসক্লাবের মূল দায়িত্ব হলো সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা, প্রশিক্ষণ ও নৈতিকতার মানদণ্ড বজায় রাখা। যখন প্রেসক্লাব কেবল কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তখন সঠিক সাংবাদিকতার চর্চা বাধাগ্রস্ত হয়। নতুন ও যোগ্য সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্তি না হলে সাংবাদিকতার মান উন্নত হওয়ার সুযোগ থাকে না। সুতরাং, প্রেসক্লাবের সংস্কারের মাধ্যমে সদস্যপদ নীতিতে স্বচ্ছতা আনা হলে, সাংবাদিকতার পেশাদারিত্ব ও গুণগত মান বাড়বে।
প্রেসক্লাব যেন ব্যক্তিস্বার্থের হাতিয়ার না হয়-
কোনো প্রেসক্লাব যদি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বা ব্যক্তি-স্বার্থে পরিচালিত হয়, তাহলে সেটি স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ উঠেছে যে, এটি কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে প্রকৃত সাংবাদিকদের জায়গা নেই। প্রেসক্লাবের সংস্কার হলে এটি সত্যিকারের সাংবাদিকদের জন্য উন্মুক্ত হবে এবং প্রেসক্লাবের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে।
গণমাধ্যম নীতিমালার বাস্তবায়ন-
বাংলাদেশের গণমাধ্যম নীতিমালায় সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যদি সাংবাদিকরা একটি প্রেসক্লাবে সদস্য হতে না পারেন এবং সেখানে কেবল সুবিধাভোগীদের স্থান দেওয়া হয়, তাহলে গণমাধ্যম নীতিমালার চেতনা ব্যাহত হয়। প্রেসক্লাবের সংস্কারের মাধ্যমে নীতিমালা অনুযায়ী একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে, যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের চর্চা সুরক্ষিত থাকবে।
সাংবাদিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা-
সংবাদকর্মীদের অধিকার সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা দেওয়া প্রেসক্লাবের অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু যখন নির্দিষ্ট গোষ্ঠী দ্বারা প্রেসক্লাব নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন প্রকৃত সাংবাদিকদের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। বিশেষ করে, যারা ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন, তারা চাপে পড়েন। প্রেসক্লাবের সংস্কার হলে সব সাংবাদিকের সমান অধিকার নিশ্চিত হবে এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংরক্ষিত হবে।
সাংবাদিকতা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সংস্কার প্রয়োজন-
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের স্বেচ্ছাচারিতা, জাতীয় পতাকা অবমাননা এবং প্রকৃত সাংবাদিকদের বঞ্চিত করার ঘটনাগুলো এটি সংস্কারের জরুরতকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। গণমাধ্যম হলো সমাজের দর্পণ, আর সাংবাদিকদের ন্যায্য সুযোগ না থাকলে এই দর্পণ ঝাপসা হয়ে যাবে। প্রেসক্লাবের সংস্কার করে প্রকৃত সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হলে, স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং সঠিক তথ্যপ্রবাহ বজায় থাকবে, যা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে।