সকল খবর দেশের খবর

নববর্ষের শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ!

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ১৩-৪-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৪২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নববর্ষের শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম পরিবর্তন করে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ রাখায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং আয়োজক কমিটিকে নাম পরিবর্তনের যথার্থ কারণ ব্যাখ্যা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ রোববার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরেন। তারা শোভাযাত্রা আয়োজনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে দুর্বলতা ও গত বছরের মতো শিক্ষার্থীদেরকে শোভাযাত্রা আয়োজনের দায়িত্ব না দেওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

চারুকলার প্রিন্ট মেকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাহরা নাজিফা বলেন, “এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করা হয়েছে। আমরা এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করছি না। চারুকলার শিক্ষার্থীদের কোনো মতামত ছাড়াই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিবাদের সঙ্গে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামের ‘মঙ্গল’ অংশটি নিয়ে হাস্যকর মন্তব্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালে এই নাম পরিবর্তন করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জন্য ব্যবহার করা শুরু হয়। অথচ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের বৈশাখের তিন মাস পর জুলাইয়ে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসে।”

জাহরা নাজিফা দাবি করেন, যে সিনেট সভায় নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেখানে শিক্ষার্থীদের রাখা হয়নি। “এই আয়োজনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই নাম পরিবর্তন করা হয়েছে,” বলেন তিনি।

চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী জাহিদ জামিল বলেন, “গত মাসের শেষের দিকে আমরা সবাইকে নিয়ে আলোচনা করি, সেখানে সবাই একমতে আসতে পারি। তবে পরবর্তীতে অজুহাত দেখিয়ে নাম পরিবর্তন করা হয়, এবং নাম পরিবর্তনের কোনো যৌক্তিক কারণ জানাননি ডিন।”

শিক্ষার্থীরা বলেন, নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তাদের কোনো আপত্তি নেই, তবে তারা শুধু যৌক্তিক কারণ জানতে চান। “১৯৯৬ সালের পরিবর্তন অন্যায় হলে, এবারও অন্যায় হতে পারে,” বলে মন্তব্য করেন তারা।

এছাড়া, শোভাযাত্রা আয়োজনের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাহরা নাজিফা। তিনি বলেন, “১৯৮৯ সাল থেকে এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে হলেও, এবার তা শিক্ষকদের হাতে চলে গেছে। শিক্ষকদের একপেশে সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ।”

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আগামী দিনে সব সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা একযোগে নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানান এবং বিষয়টি সমাধানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছেন।

এর আগে, গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি জানিয়ে বলেন, “১৯৮৯ সালে নববর্ষের শোভাযাত্রা শুরু হয়, তখন নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। আমরা সে নাম পুনরুদ্ধার করেছি, এটি কোনো পরিবর্তন নয়, বরং নামের পুনরুদ্ধার।”

তিনি আরও জানান, মঙ্গল শব্দ নিয়ে বিতর্কের কারণে এই পরিবর্তন করা হয়েছে, এবং প্রতিবছরই এই নাম নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছিল। “আমরা একটি নামেই ফিরে গেছি যা সবার জন্য গ্রহণযোগ্য,” বলেন তিনি।