নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির ডা. আবদুল্লাহ মো. তাহের দাবি করেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনো না কোনো চাপে পড়ে নির্বাচন ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রোববার (৩১ আগস্ট) রাজধানীতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “একই দিনে দুপুরে ‘জুলাই সনদ’ এবং বিকেলে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে নির্বাচন নিয়ে ঘোষণা—এই দুটি বিষয় একসঙ্গে করাটা আমাদের কাছে চাপের ইঙ্গিতই দেয়। দুটোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আমরা মনে করি, ওইদিনই নির্বাচন ঘোষণা দেয়ার পেছনে বিশেষ কোনো চাপ বা রাজনৈতিক কৌশল কাজ করেছে।”
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে—এতে আমাদের মত আছে। কিন্তু বাস্তবে তা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে আমরা সন্দিহান। একটি দল যেমন চেয়েছে, বিষয়টি তেমনভাবেই হয়েছে। এতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।”
জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচনের তারিখ নিয়ে তাদের আপত্তি নেই। তবে ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা রয়েছে। সব দলের সঙ্গে আলোচনা না করে হুট করেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। এ কারণে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ডা. তাহের বলেন, “আগে একদল চাঁদাবাজি করত, এখন আরেকদল করছে। সরকার এসব নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। যারা দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না, তারা কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করবে? আমরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পক্ষে, তবে তার জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে।”
অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি নিয়ে তিনি জানান, ৩১ দলের মধ্যে ২৫টি দল এ পদ্ধতির পক্ষে থাকলেও সবাই সমমত নয়। কেউ শুধুমাত্র উচ্চকক্ষে চায়, জামায়াত সর্বস্তরে পিআর চায়। এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে জামায়াত নেতারা বলেন, “শুধু নিন্দা দিয়ে হবে না। যেভাবে তার ওপর হামলা হয়েছে, তাকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতার নায়ক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, প্রয়োজন হলে নতুন শব্দই আবিষ্কার করতে হবে।”
বৈঠকে জামায়াতের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। নেতৃত্ব দেন নায়েবে আমির ডা. আবদুল্লাহ মো. তাহের। অন্য সদস্যরা ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এবং হামিদুর রহমান আযাদ। সরকার পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।