সকল খবর দেশের খবর

পুলিশের কার্যক্রমে বাধা ও চ্যালেঞ্জ: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংকট !

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ২২-৩-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৬২

দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের কার্যক্রমে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। কোথাও হামলা, কোথাও ভাঙচুর, আবার কোথাও ঘেরাও করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। এসব কারণে অপরাধ দমনে পুলিশের পক্ষে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ কেন মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারছে না বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে পারছে না? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতার কথা।  

মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের মতে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা বাস্তবায়নে অস্পষ্টতা ও সমন্বয়হীনতা একটি বড় সমস্যা। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ের পুলিশকে সরাসরি নির্দেশনা দিলেও, কীভাবে বা কোন কৌশলে তা বাস্তবায়ন করতে হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয় না। আবার কাজের দায়িত্বও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নেন না, যা মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।  

তদন্তকাজে যাতায়াত খরচের ব্যবস্থা না থাকা, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব এবং প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাও পুলিশের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে। মাঠপর্যায়ের তদন্ত কর্মকর্তাদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ সরবরাহ করা না হলেও, তাদের ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) সফটওয়্যারে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বাধ্য করা হয়। অন্যদিকে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য জ্বালানি তেলের বরাদ্দ থাকলেও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য এ ধরনের সুবিধা নেই।  

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আইনকে তাচ্ছিল্য করার প্রবণতা এবং শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধা কাজ করে। অনেকেই প্রশাসনিক জবাবদিহির ভয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে ভয় পাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ‘মব ভায়োলেন্স’ বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন।  

সম্প্রতি রাজধানীর খিলক্ষেতে ছয় বছরের এক শিশু ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে অভিযুক্তকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দেয়। এ ধরনের ঘটনা পুলিশের কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি উত্তরা-পশ্চিম থানায় হামলা ও ভাঙচুর চালায় শিক্ষার্থীরা।  

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, মব ভায়োলেন্স সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। মব করেও যে পার পাওয়া যাবে না, এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে।  

১৭ মার্চ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের ১২৭ পুলিশ কর্মকর্তার বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ বলেন, এখনই পুলিশ কমিশন গঠন করা না হলে কোনো দিনই হবে না। পুলিশ কমিশন গঠনের দাবি দীর্ঘদিনের। পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের কথা বারবার উঠলেও তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।  

অপরাধ ও সমাজ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে পুলিশ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করছে, তাদের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে সমস্যা আরও বাড়বে।  

পুলিশের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সংস্কার, সুস্পষ্ট নির্দেশনা এবং মাঠপর্যায়ের সদস্যদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি। তা না হলে অপরাধ দমন ও শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের কার্যকর ভূমিকা রাখা কঠিন হবে।