অন্যান্য খবর ব্যবসা ও বাণিজ্য

রূপপুর প্রকল্পে দেড় বছরের ঋণ ছাড়!

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ১৭-৪-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৭৪

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশকে দেড় বছর সময় বাড়িয়েছে রাশিয়া। একইসঙ্গে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য নেওয়া ৫০ কোটি ডলারের ঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ না করায় যে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বেশি জরিমানা হওয়ার কথা ছিল, সেটিও মওকুফ করেছে পুতিন প্রশাসন।

মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মার্চ থেকে এই প্রকল্পের মূল ঋণ ও সুদ পরিশোধ শুরু করার কথা ছিল। তবে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে জটিলতা ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ সময় বাড়াতে অনুরোধ জানায়। সরকার ২০২৯ সালের মার্চ পর্যন্ত সময় চাইলেও, রাশিয়া নতুন করে ২০২৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে পরিশোধ শুরুর সময় নির্ধারণ করে সংশোধিত প্রটোকল পাঠিয়েছে।

বুধবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ইউরোপ উইংয়ের প্রধান ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, রাশিয়ার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার ভিত্তিতে এ সময়সীমা ও জরিমানা মওকুফের সিদ্ধান্ত এসেছে। পাশাপাশি, প্রকল্পের নির্মাণকাজ এখনো সম্পূর্ণ না হওয়ায় আরও দুই বছর সময় বাড়ানোর জন্য আলোচনা চলছে, এবং রাশিয়া তাতে নীতিগত সম্মতি দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, রূপপুর প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য নেওয়া ঋণের অর্থ এরই মধ্যে একটি আলাদা ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই অর্থ ডলারে রূপান্তর করে পাঠানো সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে বিকল্প কোনো অর্থপ্রদানের প্রক্রিয়া চালু করার বিষয়ে আলোচনা চলছে, যদিও এখনো চূড়ান্ত কোনো সমাধানে পৌঁছায়নি দুই পক্ষ।

দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৯০ শতাংশ অর্থায়ন করছে রাশিয়া। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ৭.৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে। বাকিটা—প্রায় ৩.৬৮ বিলিয়ন ডলার—২০২৫ সালের মধ্যে ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত রোসাটম স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশন। প্রকল্পের নির্মাণকাজ ২০১৭ সালে শুরু হয় এবং ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তা সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের সঙ্গে ঋণ পরিশোধে সময় ও শর্তে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে একাধিক আলোচনার উদ্যোগ নেয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভের বৈঠকে রূপপুর প্রকল্পের ঋণ চুক্তির সংশোধনী নিয়ে একমত হয় উভয় পক্ষ।

সংশোধিত প্রটোকলের খসড়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ছাড় হিসেবে এক মাসের ঋণ বিলম্বের জন্য ৪.৫ শতাংশ জরিমানা পরিশোধের শর্তও বাতিল করা হয়েছে। ফলে ২০২২ সালের ১৫ মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময়ের জন্য যে জরিমানার সম্ভাবনা ছিল, তা থেকে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশ।

রূপপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এটি দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যার মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে প্রায় ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।