বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপের ওপর আমেরিকার সম্ভাব্য ঘাঁটি স্থাপনের গুঞ্জন দীর্ঘদিন ধরে শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে, শেখ হাসিনার আমলে এই বিষয়টি আরও আলোচিত হয় এবং সেন্টমার্টিন নিয়ে বিভিন্ন উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তবে প্রশ্ন হলো, কেন সেন্টমার্টিন পরাশক্তির কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে?
আমেরিকা, যাকে বিশ্ব মোড়ল হিসেবে পরিচিত, তার বৈশ্বিক প্রভাব ও আধিপত্য সৃষ্টি একদিনে হয়নি। দীর্ঘ সময়ের প্রচেষ্টা, নির্দিষ্ট পরিকল্পনা, কঠোর পরিশ্রম ও ভাগ্যের সমন্বয়ে আমেরিকা এই অবস্থানে পৌঁছেছে। আমেরিকার ভৌগোলিক অবস্থানই তাদের সফলতার অন্যতম প্রধান কারণ। আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যবর্তী অবস্থানে থাকার কারণে, তারা বিশ্বের অন্যান্য শক্তির আক্রমণ থেকে নিরাপদ ছিল। তবে যুদ্ধকালীন সময়ে ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সুযোগে, আমেরিকা নিজেকে বিশ্ব সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়।
বিশ্বযুদ্ধের সময়ে প্রথমে নিরপেক্ষ থাকার পর, পরবর্তীতে "ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি নীতি" এবং "ল্যান্ড লিজ আইন" গ্রহণের মাধ্যমে মিত্রশক্তির সাহায্যে অস্ত্র সরবরাহ এবং সামরিক সহায়তা প্রদান করে আমেরিকা ইউরোপে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে তারা ইউরোপকে আর্থিক সহায়তা দেয় এবং ন্যাটো (NATO) প্রতিষ্ঠা করে, যা তাদের সামরিক শক্তি আরও দৃঢ় করে। এর মাধ্যমে আমেরিকা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা শুরু করে।
সেন্টমার্টিনে আমেরিকার ঘাঁটি স্থাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে, কারণ বঙ্গোপসাগরে তাদের কোন সামরিক বা নৌ ঘাঁটি নেই। দক্ষিণ এশিয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে উপস্থিতি থাকলে, আমেরিকা তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, চীন, এবং উদীয়মান পরাশক্তি ভারতকে খুব সহজেই পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। চীনের অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের কাছে সেন্টমার্টিনের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।
চীন বর্তমানে "মেড ইন চায়না" ও "বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ" নামে দুটি পলিসি গ্রহণ করেছে যার মাধ্যমে তারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। চীনের জন্য জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের নিজস্ব শক্তি সম্পদ সীমিত। তারা আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে জ্বালানি আমদানি করে এবং এই রুটগুলোর মাধ্যমে শক্তি শোষণ ও পরিবহন করে থাকে।
তবে, সেন্টমার্টিনের অবস্থান আমেরিকার জন্য এক অসীম সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যদি আমেরিকা সেন্টমার্টিনে সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়, তবে চীনকে মোকাবেলা করা এবং বিশ্ব শক্তির দৌড়ে এগিয়ে থাকা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। আমেরিকার জন্য সেন্টমার্টিনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের বঙ্গোপসাগরে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় মূল জায়গা হতে পারে।
তাই, দক্ষিণ এশিয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপটি বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তির নজরে রয়েছে এবং সেন্টমার্টিনের নিয়ন্ত্রণ ভবিষ্যতে বিশ্বশক্তির পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।