পিরোজপুর জেলায় সড়ক সংস্কার বা প্রশস্তকরণের কোনো কাজ না করেই প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের কাগজপত্র জালিয়াতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এই অর্থ লোপাটের ঘটনায় মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দীন মহারাজের ভাই ও ঠিকাদার মিরাজুল ইসলাম।
সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০২২ সালে ‘গ্রামীণ সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প’ গ্রহণ করে, যার মোট ব্যয় ছিল ২,৬৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে পিরোজপুর জেলার জন্য ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৫৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের আওতায় ঘোষিত ১১৮টি স্কিমে কোনো দৃশ্যমান কাজ হয়নি বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
মিরাজুল ইসলামের মালিকানাধীন ‘ইফতি ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড’ ও ‘সাউথ বাংলা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসব স্কিমের কার্যাদেশ পায়। তদন্তে উঠে এসেছে, কাজ না করেই বিল উত্তোলন করা হয়, যা সম্ভব হয় সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, হিসাবরক্ষক এবং জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে।
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া, সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানি উপজেলার ১১৮টি স্কিমে অন্তত ৩৫০ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয় কাজ না করেই। এমনকি প্রকল্পের দরপত্র, স্কিম নম্বর, কার্যাদেশ, কাজের প্রত্যয়নপত্র, পরিমাপ বইয়ের মতো প্রয়োজনীয় কোনো কাগজপত্র না থাকলেও বিল অনুমোদন দেওয়া হয়।
দুদকের পক্ষ থেকে গত ১৬ এপ্রিল দায়ের করা মামলায় ১৪ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে এলজিইডি ও জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মূল অভিযুক্ত মিরাজুল ইসলামসহ ১০ জন এখনো পলাতক।
এলজিইডির বিভিন্ন কর্মকর্তা ও দুর্নীতির অনুসন্ধানী সংস্থার মতে, এই লুটপাটের সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার নামও জড়িয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া একাধিক কর্মকর্তার দাবি, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া এলাকার বাসিন্দা ওই মুখ্য সচিব বিল অনুমোদনে নিয়মিত চাপ প্রয়োগ করতেন এবং মিরাজুলের মুঠোফোন থেকে সরাসরি নির্দেশ দিতেন।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, প্রকল্পের অর্থ ছাড়ের আগে মাঠপর্যায়ের পরিদর্শন ও প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। প্রকল্পের জন্য গঠিত ছয় সদস্যের কমিটি মাঠ পর্যবেক্ষণে গিয়ে কোনো কাজের অস্তিত্ব পাননি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "ভাণ্ডারিয়া ও নেছারাবাদ এলাকায় পরিদর্শনে গিয়ে কোথাও কোনো কাজের চিহ্নও পাইনি।"
এদিকে এলজিইডির পিরোজপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী হরষিত সরকার জানান, "প্রয়োজনীয় নথিপত্র ছাড়াই বিল অনুমোদন হয়েছে, যা প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার চরম লঙ্ঘন।"
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।