সকল খবর দেশের খবর

সরকারবিরোধী গোপন বৈঠকে জড়িত থাকার অভিযোগে মেজর সাদিকের স্ত্রী গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, অনিন্দ্যবাংলা

প্রকাশ : ৬-৮-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০১১

সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র ও গেরিলা প্রশিক্ষণ আয়োজনের ঘটনায় আলোচিত সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) সাদিকুল হকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গোপন বৈঠকে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়।

বুধবার (৬ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, রাজধানীর ভাটারা এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে সরকার পতনের লক্ষ্যে গোপন বৈঠকে অংশ নেওয়ার অভিযোগে সুমাইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি ডিবির হেফাজতে আছেন এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ জুলাই ওই কনভেনশন সেন্টারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা গোপন বৈঠকে প্রায় ৪০০ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীকে গেরিলা কৌশল ও সংঘর্ষমূলক কার্যক্রমের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। উপস্থিতদের উদ্দেশ্য ছিল, দেশে অস্থিরতা তৈরি করে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র নৈরাজ্য সৃষ্টি করা এবং রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করে তোলা।

ঘটনার প্রায় তিন সপ্তাহ পর বিষয়টি জনসমক্ষে আসলে দেশজুড়ে শুরু হয় তীব্র আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া। গোপন প্রশিক্ষণের পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী শামীমা নাসরিন শম্পা, বরগুনা জেলা যুবলীগের নেতা সোহেল রানা এবং মেহেরপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটনকে ১২ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধীরে ধীরে জড়িত অন্যান্যদেরও শনাক্ত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে, পুরো পরিকল্পনার মূল কাণ্ডারি ছিলেন সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সাদিকুল হক। তার সঙ্গে সমন্বয় করেই ওই বৈঠক ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছিল, এবং এই কার্যক্রমে তার স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

প্রথমদিকে সুমাইয়াকে পুলিশ কর্মকর্তা (এএসপি) হিসেবে পরিচয় দেওয়া হলেও, পরে পুলিশ সদরদপ্তর নিশ্চিত করে যে, “সুমাইয়া জাফরিন” নামে কোনো নারী কর্মকর্তা পুলিশের পে-রোলে নেই।

এদিকে, ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনী মেজর সাদিকুল হককে নিজ হেফাজতে নেয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে একটি সামরিক তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

এই ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরেই গোপনে এ ধরনের চরমপন্থী প্রশিক্ষণের আয়োজন উদ্বেগজনক এবং তা ভবিষ্যতের জন্য একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে।