টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার বাঁশহাটি এলাকার স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগ ‘অভয়ারণ্য’ পাঠাগারে হামলা ও পাঁচ শতাধিক বই লুটের অভিযোগ উঠেছে। ধর্মীয় উসকানি ও "নাস্তিকতা প্রচার" এর অভিযোগ তুলে গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় একদল যুবক পাঠাগারে চড়াও হয়ে পাঠকদের হুমকি দিয়ে বের করে দেয় এবং কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হুমায়ুন আহমেদসহ খ্যাতিমান লেখকদের শত শত বই বস্তায় ভরে নিয়ে যায়।
পাঠাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, ঘটনার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে পাঠাগারটি আপাতত বন্ধ রয়েছে এবং স্থানীয় পাঠকরা বই পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ঘটনার সূত্রপাত হয় ইসলামী খেলাফত মজলিশ ধনবাড়ী শাখার নেতা গোলাম রব্বানীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্ট থেকে। তিনি স্ট্যাটাসে লেখেন, “নাস্তিকদের কারখানা ধনবাড়ী অভয়ারণ্য পাঠাগার উচ্ছেদ করতে হবে” এবং এ কাজে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
পরদিন রাত ৮টার দিকে একদল যুবক পাঠাগারে প্রবেশ করে বলে, “এখানে নাস্তিকদের বই পড়ানো হয়, সমাজকে ধ্বংস করা হচ্ছে।” এরপর তারা পাঠকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দেয় এবং আলমারি থেকে শত শত বই বের করে বস্তাবন্দী করে নিয়ে যায়।
পাঠাগারের সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ জানান, তিনি হামলাকারীদের বুঝিয়ে বলেন যে পাঠাগারে কোনো নিষিদ্ধ বা ধর্মবিরোধী বই নেই। কিন্তু তারা উল্টো ভয়ভীতি দেখিয়ে বই নিয়ে যেতে থাকে। তিনি জানান, ঘটনার সময় একজন গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয় এবং লুট করা বইগুলো উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয়ে জমা রাখা হয়।
এ বিষয়ে পাঠাগার কর্তৃপক্ষ শুক্রবার উপজেলা প্রশাসন ও শনিবার ধনবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিন মাহমুদ বলেন, “ঘটনার পরপরই পাঠাগার পরিদর্শন করেছি। বস্তাবন্দী বইগুলো এখনও খতিয়ে দেখা হয়নি। রোববার উভয় পক্ষকে ডাকা হয়েছে—তখন যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে, গোলাম রব্বানী স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, “এই পাঠাগার পরিচালনাকারীরা নাস্তিকতা ছড়ায়। তাই সমাজের কল্যাণে পাঠাগারটি বন্ধ করতেই হয়েছে।”
ধনবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম শহিদুল্লাহ বলেন, “এটি বড় কোনো ঘটনা নয়। বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চলছে।”
গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের কর্ণধার আব্দুস ছাত্তার খান এক বিবৃতিতে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন এবং প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
আজ রোববার বিকেল ৫টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এক নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে, যেখানে এ ঘটনার ন্যায়বিচার এবং পাঠাগার পুনরায় চালুর দাবিতে জনসাধারণ একত্র হবেন।